সিক্স স্টেজ অফ কাস্টমার লাইফ সাইকেল

সিক্স স্টেজ অফ কাস্টমার লাইফ সাইকেল

যেকোনো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল টার্গেট গোল সেট করে প্ল্যান মাফিক এগিয়ে যাওয়া। সেজন্য সর্বপ্রথম জানতে হবে কাস্টমার লাইফসাইকেল এর প্রতিটি ধাপে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং গোল কি। আর এর ফলে ক্রেতাদের বায়িং জার্নির প্রত্যেক স্টেজে সলিড ফাউন্ডেশন তৈরী হয় যা আপনার জন্য একটা রোডম্যাপ যার উপর ভিত্তি করে আপনি সঠিক সময়ে সঠিক প্লাটফর্ম, মেসেজ কিংবা অফার দিতে পারছেন আপনার কাস্টমারদের।

যখন আপনি কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করেন (ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ), তাদের “বায়ার জার্নি ” ও কাস্টমার লাইফসাইকেল এর বর্তমান অবস্থান আপনাকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে। যার ফলে আপনি সঠিক সময়ে সঠিক মেসেজ প্রদান করতে পারছেন। আপনার বায়ারদের গোল কি? ১) কোনো বিশেষ প্রয়োজন মেটানো ২) কোনো বিশেষ সমস্যার সমাধান করা।

আর তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আপনার দরকার ক্লিয়ার আন্ডারস্ট্যান্ডিং- তারা কোন লেভেল রয়েছে। কাস্টমার লাইফসাইকেল এ গতি আন্তে যথাসময়ে সঠিক কল টু একশন দিতে হবে। ” মাৰ্কেটু “- একটা বি টু বি প্লাটফর্ম, তারা কাস্টমার লাইফসাইকেলকে ৬ টি স্টেজে ভাগ করেছে। ১) আওয়ার্নেস ২) এঙ্গেইজমেন্ট ৩) পারচেজ ৪) রিটেনশন/লোয়েলটি ৫) গ্রোথ ৬) এডভোকেসি। প্রতিটি বায়ারের যাত্রাপথ এই ৬ টি তরঙ্গে উঠানামা করে। কখনো উপরে উঠে আবার নিচে নেমে যায়, কখনো হারিয়ে যায়, কখনো মজবুত সম্পর্ক গড়ে উঠে। চলুন আমরা এই ৬ টি স্টেজ বিস্তারিত জানি :

সিক্স স্টেজ অফ কাস্টমার লাইফসাইকেল

১) আওয়ার্নেস

কাস্টমার লাইফসাইকেলের প্রথম ধাপ হল আওয়ার্নেস। এখানে প্রয়োজন হল গুড ব্র্যান্ডিং, হয় রেংকিং, স্ট্রং সোশ্যাল প্রেজেন্স। এই স্টেজে আপনার কর্তব্য হল : ব্র্যান্ড আওয়ার্নেস, ক্যাপচার অডিয়েন্স ইন্টারেস্ট, রিচ দেম উইথ রাইট চ্যানেল উইথ রিলেভেন্ট, পার্সোনালাইজড মেসেজ। এই অবস্থায় আমাদের বাংলাদেশি ই কমার্স বিজনেসম্যানদের মস্ত বড় গলদ হচ্ছে: তারা বিজ্ঞাপনে এঙ্গেইজড পার্সনদের ট্র্যাক রাখে না। আজকের বিজ্ঞাপনে যাদেরকে টার্গেট করেছেন কাল আর ওদের খবর-ই রাখেন না। বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনি আশা ভর করে আছেন- শত শত কল আসবে। দিন শেষে হতাশ ! আর পরদিন ভাবছেন: গতকাল টার্গেট করে কোনো রেজাল্ট পাইনি, সো আজ নতুন করে টার্গেট করি। গতকাল ঢাকায় টার্গেট করেছি, আজ চিটাগং করি। আমরা যদি বলি: ভাই, গতকাল যাদের টার্গেট করেছেন, আজ আবার তাদের-ই টার্গেট করেন। বিজনেসম্যানদের বক্তব্য হচ্ছে : মাথা নষ্ট, গতকাল ১০ ডলার পানিতে ফেলছি, আজ আবার ১০ ডলার পানিতে ফেলার কুবুদ্ধি দিচ্ছেন !

২) এঙ্গেইজমেন্ট :

এই স্টেজে বায়াররা আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিসের প্রতি ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে এবং পোটেনশিয়াল কাস্টমারে কনভার্ট হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার গোল হলো : তাদের বিহেভিয়ার ভালো ভাবে রপ্ত করা আর সঠিক মেসেজ প্রদান করা যাতে তারা আপনার প্রোডাক্ট এর প্রতি আরো উৎসাহী হয় এবং কনভার্সেশন আগ্রহী হয়। এই স্টেজে আপনি কাস্টমারদের সুনির্দিষ্ট অফার দিবেন আর প্রোডাক্ট সম্পর্কে শিক্ষাদান করবেন। এই শিক্ষাদান চলতে থাকবে যতক্ষণ না তারা প্রোডাক্ট কিনছে। এই শিক্ষাদান ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হতে পারে, ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে হতে পারে। অফারে থাকতে পারে : ফ্রি গাইড টু ডাউনলোড, হাউ টু ইন্সটল, হাউ টু ইউজ প্রোডাক্ট/সার্ভিস, বেনিফিটস অফ ইউজ, স্পেসিফিক ব্লগ/ইউটিউব ভিডিও তে আমন্ত্রণ জানানো ইত্যাদি।

আর আপনারা কি ফ্রি অফার দেন : ৮০% ছাড়ে কিনুন, আজকের মধ্যে কিনলে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি, দুইটা কিনলে একটা ফ্রি ইত্যাদি। চিন্তা করে দেখুনতো, এর ফলে কাস্টমারদের ট্রাস্ট কি আরো বাড়ছে ? না তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ? নতুন কোনো কাস্টমার তৈরী হবে কি? এক্সিস্টিং কাস্টমারদের ধরে রাখতে পারবেন কি?

আর যদি ব্লগ/ ইউটিউব ভিডিও/ ফ্রি গাইড ইত্যাদি অফার করেন তাহলে তারা ওই ব্লগ পড়তে আসবে আপনার সাইটে। শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠবে আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিসের প্রতি। দুর্বলতা তৈরী হবে। আজ না কিনলেও তাদের লিস্টে এই প্রোডাক্ট রাখবে যাতে পরবর্তী মাসের শুরুতে কিনতে পারে। এখন সঠিক ডিসিশন নিন, কি করা উচিত আপনাদের ? আর কোন ট্র্যাকে আছে বর্তমান বাংলাদেশ ই কমার্স বিজনেস ?

৩) পারচেজ :

এই স্টেজে আপনার বায়াররা প্রোডাক্ট সার্ভিস কেনার জন্য রেডি। আর সেজন্য প্রসেস যত সহজ সরল করা যায়, যাতে বায়াররা কোনো প্রকার ডিসকম্ফোর্ট ফীল না করে, সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পারচেজ প্রসেস মনিটর করুন, যাতে নিউ কাস্টমারদের জন্য ট্রানজেকশন পথ ইজি হয়। যদি এই ট্রানজেকশন প্রসেসে থার্ড কোনো সেলস বা সাপোর্ট পার্টি ইনভল্ভড থাকে তাহলে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে কিনা তদারক রাখুন।

৪) রিটেনশন/ লোয়েলটি :

বিজনেসের অতি দ্রুত উচ্চ রেভেনিউ অর্জনের সহজ পন্থা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে: একবার একটা প্রোডাক্ট কাস্টমারের হাতে পৌছাইতে পারলেই হলো। ওই কাস্টমারের খুজঁখবর আর জীবনেও রাখেন না। এটা আরেকটা মস্ত বড় ভুল ঘটে চলছে। এক্সিস্টিং কাস্টমারদের সাথে ট্রাসটিং, লং টার্ম রিলেশনশিপ গড়ার কোনো প্ৰয়োজনীয়তা-ই কেউ অনুভব করেন না।
অলরেডি যারা আপনার থেকে প্রোডাক্ট সার্ভিস নিয়েছে, তারা যদি পরবর্তিবার কেনার সময়ে আপনার কথা মনে পড়ে, সেইরকম কিছু ব্যবস্থা কি কখনো মনে করেছেন ? অথবা অলরেডি কেনাকাটা করেছে, শুধু এই ধরণের লোকেদের কে পরবর্তিবার অন্য কোনো প্রোডাক্ট প্রমোশন করেন কি ? যদি পূর্ব অভিজ্ঞতা সন্তুষ্টজনক হয়, তাহলে তারা আপনার থেকেই কেনাকাটা করবে। এটা ১০০% নিশ্চিত। অফলাইন কেনাকাটায় আপনিও এই কাজটি করেন। বাজারে গিয়ে সেই দোকানদারের কাছেই যান, যার সাথে আগের কেনাকাটা/ লেনদেন সন্তুষ্টজনক। এমনকি দাম জিজ্ঞাসা করেন না, সোজা ব্যাগের ভিতর ভরেন, আর পরে একসাথে দাম দিয়ে দেন। এতটা বিশ্বাস কেন করছেন ? কারণ, জানেন, ওই ব্যক্তিটি প্রতারণা করবে না। আপনি কখনো এই ধরণের রিলেশন গড়ার চিন্তাভাবনা করেছেন এক্সিস্টিং কাস্টমারদের সাথে। ওরা আপনার লাইফটাইম বান্ধা কাস্টমার হতো।
হয়তো এক্সিস্টিং কাস্টমাররা কখনো কল দিলে প্রোডাক্ট বিক্রি করেন। আপনার কোনো স্ট্র্যাটেজি তো নাই- নতুন কোনো প্রোডাক্ট তাদের কাছে প্রমোট করার। আপনার কাছে কোনো এক্সিস্টিং কাস্টমারের ডাটাবেজ-ই পাওয়া যায় না। টার্গেট করবেন কি করে ?
আজ থেকেই তাদের ডাটাবেজ রাখুন, কে কোন প্রোডাক্ট কিনেছিলো, কোন মডেলের, কোন তারিখে, কয়টা, তাদের মোবাইল নাম্বার, ইমেইল, ইত্যাদি। আর যারা ফোন দিয়েছিলো, কিন্তু প্রোডাক্ট নেয়নি, তাদের ডাটাবেজ ও রাখুন। কারণ তারা ইন্টারেস্টেড বলেই ফোন দিয়েছিলো। বিশেষ অসুবিধার জন্য কিনেনি। পরে কিনবে। সো, তাদেরকে-ও টার্গেট করে এডস দিতে হবে।
এক্সিস্টিং কাস্টমারদের কন্টিনিউ ভ্যালু ও মেসেজ দিয়ে যেতে থাকে হবে আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিস সম্পর্কে। কাস্টমার সার্ভিসে কোনো অভিযোগ আসলে ও দ্রুত সম্ভব মিটমাট করতে হবে। ৫৩% অভিযোগকারীরা এক ঘন্টার মধ্যে সন্তুষ্টজনক রেজাল্ট পেতে চায়। আর যদি কোনো রেজাল্ট না পায়, তাহলে তারা তাদের ফ্রেন্ড, ফ্যামিলি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করে থাকে। আর এর পরিণতি কি, আশা করি বুঝতে পারছেন।

৫) গ্রোথ :

সেল করার পর-ই মার্কেটিং শেষ হয়ে যায় না। ক্রসসেল ও আপসেল প্রোমোশনের মাধ্যমে এই ধারা অব্যাহত রাখুন। কারেন্ট কাস্টমারদের নিউ অফার সম্পর্কে এযুকেট ও প্রমোশন অব্যাহত রাখতে হবে। এই বিষয়ে আপনার কাস্টমারদের (পেইজ ফ্যানদের ) সমস্ত ডাটা পাবেন আপনার বিজনেস পেইজ থেকে। যথাযথ ইনফরমেশন পাওয়ার পর সেইভাবে পার্সোনালাইজড ও মোস্ট নীডেড প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারলে আপনার প্রোডাক্ট হিট করবেই (সেল হবেই )।

৬) এডভোকেসি :

কাস্টমারের লাইফসাইকেলে এঙ্গেইজিং হওয়া মানে এই নয় যে, শুধুমাত্র ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রাখা। ইন্ডিভিজুয়াল কাস্টমারের নেটওয়ার্কে আরো যারা ফ্রেন্ডস, ও অন্যান্য পরিচিত জন আছেন, তাদের সবার সাথেই সম্পর্ক গড়ে তুলে শক্ত মজবুত বিজনেস তৈরী করতে হবে। যারা আপনার লয়েল কাস্টমার, তাদের সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা আপনার ব্র্যান্ড /প্রোডাক্ট/সার্ভিস রিকমেন্ড করে তাদের ফ্রেন্ড, ফ্যামিলি ও নেটওয়ার্কের সবাইকে। স্পেশ্যাল অনুষ্ঠান, গিফট, ইনসেনটিভ ইত্যাদি বিভিন্ন পন্থায় এক্সিস্টিং কাস্টমারদের সাথে বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করতে হবে। আপনার গোল হচ্ছে : এই বিস্বস্ত কাস্টমাররা আপনার ব্র্যান্ড এডভোকেট হবে এবং তাদের নেটওয়ার্কের সবাইকে আপনার পণ্য রিকমেন্ড করবে। মাঝে মাঝে এক্সিস্টিং কাস্টমারদের কাছে এডস প্রমোশন করতে হবে স্পেশ্যাল অফার প্রদান পূর্বক। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, এই এডভোকেসি কোনো অবস্থাতেই এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ) যেন না হয়। ফেসবুক ও বাংলাদেশ সরকার উভয় কর্তৃক এই এমএলএম নিষিদ্ধ। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আপনার গুনগান করা আর লোভে পরে (ডায়মন্ড, গোল্ড মেম্বার ইত্যাদি) উৎসাহিত করা এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে।


কাস্টমার লাইফসাইকেল বিস্তারিত আলোচনা করলাম। পাকাপোক্ত একটা ফেসবুক মার্কেটিং প্ল্যান তৈরী করে ফেলুন তাহলে। এখন সঠিক ডিসিশন গ্রহণ করুন। লং টার্ম ই-কমার্স বিজনেস করতে চাইলে এই বিষয়ে স্পেশ্যাল এটেনশন দিতেই হবে। পুরো বছরের, ছয় মাসের, তিন মাসের, এক মাসের, এক সপ্তাহের, প্রতিদিনের বিজনেস প্ল্যান থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট গোল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর এই সমস্ত বিষয়ে আপনার বিজনেসের জন্য সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রজন্ম ডিজিটাল লি: আছে আপনাদের পাশে । দেশের এবং দেশের বাহিরের বেশ কিছু ই-কর্মাস সহ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের টিমের, গত ৮ বছরের ও বেশী সময় ধরে মার্কেটিংয়ের ডিজিটাল মাধ্যম গুলো নিয়ে কাজ করছি । আপনারা আপনাদের বিজনেস নিয়ে যথেষ্ট মাত্রায় বিজি থাকেন। তাছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং যথেষ্ট মাত্রায় জটিল। এর বহুরূপী খোলস থেকে প্রকৃত রূপ উদ্ঘাটন করা বাস্তবিক দুরূহ কাজ। বিজনেস এগিয়ে নিতে হলে এই বিষয়ে দক্ষ লোকদের কাছ থেকে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে

Najmul Haque

মোঃ নাজমুল হক

আমি একজন উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র নির্মাতা। স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনাকে আরো সহজতম করার লক্ষ্যে  ২০১৭ প্রজন্ম ডিজিটাল লিমিটেড নামে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করি। এছাড়া ও আরো বেশ করি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *