যুদ্ধটা মুসলিম বনাম অমুসলিম নয়, যুদ্ধটা মাতৃভুমি রক্ষার

যুদ্ধটা মুসলিম বনাম অমুসলিমের নয়

সময়টা ২০২৩ সাল নতুনকরে বিশ্ব খবরের শিরোনাম ফিলিস্তান এবং ইসরাইলের যুদ্ধ । স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী সাহসী একদল যোদ্ধা, যারা গোটা বিশ্বের কাছে হামাস নামে পরিচিত। ঠিক ওই সময়টায় ফেইসবুকের পাতায় লিখেছিলাম “যুদ্ধটা মুসলিম বনাম অমুসলিম বলে আমরা কি লুকাচ্ছি না যে আসলে যুদ্ধটা মাতৃভুমি রক্ষার ? যুদ্ধটা স্থানীয় বাসিন্ধা বনাম উড়ে আসা একদল ভুমি দখলদারের বিপক্ষে ?” তার ঘন্টা কয়েকপর ফেইসবুক থেকে আমার প্রোফাইল খানা দিন দুইয়ের জন্য নাই হয়ে যায়, পরে যদি ও বহু প্রচেষ্টার ফলে পুনরায় তা পাওয়া যায় , কিন্তু পাওয়ার পরেই আরো একটা পোষ্ট করি যা আজকের এই পোষ্টে কিছুটা সংশোধন করে পুনরায় আপলোড করা হলো ।।

ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়- আব্দুল লতিফ এর কথা এবং সুরে বাংলার ভাষা আন্দোলন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া এই গানটি হয়তো কিছুটা পরিবর্তন করে বর্তমান ফিলিস্তিন এর জন্য নতুন করে তৈরি করা যায় ।

ইহুদী জাতি, এবং ইসরাইল প্রতিষ্ঠা নিয়ে গত কয়েকদিনে অনেক গুলো লেখা , বই পড়ে বস্তুত আমি অবাক হয়েছি । কারণ যখনই আপনি ইসরাইল প্রতিষ্ঠা হওয়া নিয়ে জানতে চাইবেন , তখনই সামনে আসবে জায়োনিজম ও জুদাইজম এই দুইটি শব্দ । যেখানে যারা জায়োনিজমকে ধারণ করে তারা সকলেই ইহুদি কিন্তু সকল ইহুদি জায়োনিজম সমর্থন করে না। জায়োনিজম হলো ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ও অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে আছে সরাসরি বললে ওরাই ইসরাইলি। আর অন্যদিকে জুদাইজম হলো ইহুদি ধর্মের ধর্মীয় শান্তিপ্রিয় মতবাদে বিশ্বাসী।

ভূমিদস্যু ইসরাইল এবং তার সহযোগী

সব থেকে বড় বিষয় হলো , আজ যেই দেশ গুলো দুর থেকে শোক প্রকাশ করছে কিংবা নিন্দা প্রকাশ করছে এদের মধ্যে অনেক দেশই ভুমিদস্যু ইসরাইল কে সমর্থন করেছে । উইকিপিডিয়া থেকে একটা দৃশ্য সরাসরি তুলে দিলাম:

১৫১৭ সালে এটি উসমানীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হয়; ইহুদীরা সপ্তম শতাব্দী থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছে এবং পরে তারা ইউরোপ মহাদেশে পাড়ি জমায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর ইসরায়েল (যদিও তা ফিলিস্তিন নামে একটি দেশ ছিল তবে তারা অর্থাৎ ইহুদিরা দেশটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়) দেশটি ব্রিটিশরা তাদের অধীনে নিয়ে নেয় এবং নাম রাখে ‘মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন’। ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদী ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে।

১৯২৩ সালে স্বাধীন তুরস্কের জন্ম হলে এই অঞ্চলে ইহুদীরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদগ্রীব হয়ে যান। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নরওয়ে, পোল্যান্ড, গ্রীস এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী ইহুদীদেরকে নেতারা আহ্বান জানান ইসরায়েলে বসতি গড়তে। তাছাড়া ব্রিটিশ সরকার ইহুদীদেরকে তাদের নিজস্ব ভূমি ছেড়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রায় আড়াই লাখ ইহুদী মানুষ ইসরায়েল ভূখণ্ডে পাড়ি জমায়।

১৯২১ সালে ইহুদীরা ‘হাগানাহ’ নামের এক বাহিনী তৈরি করে। এ বাহিনী ইহুদীবাদীদের রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে তারা আধা-সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয় এবং জোরপূর্বক ফিলিস্তিন দখলের পর এই বাহিনী ইসরায়েলের মূল সামরিক বাহিনী গঠন করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইউরোপ থেকে আরো ইহুদী মানুষ ইসরায়েলে আসে এবং তাদের অনেককেই হাগানাহ সহ অন্যান্য বাহিনীতে নেওয়া হয় ভবিষ্যৎ যুদ্ধের মোকাবেলা করার জন্য।

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ড্যাভিড বেন গুরিয়ন ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

১৯৪৮ সালের ১৭ মে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলকে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক সরকার ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছিলো।

এই বিষয়ে আরো বিস্তর জানতে হলে আপনাকে সাহায্য নিতে হবে আরো বিস্তর গবেষণার , যার জন্য নিতে হবে কিছু বইয়ের সাহায্য।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- আ হিস্ট্রি অব জায়োনিজম: ফ্রোম দ্য ফ্রেন্স রেভ্যোলুশন টু দ্য এস্টাবলিশমেন্ট অব দ্য স্টেট অফ ইসরায়েল (ওয়াল্টার লেকার), সিক্রেটস অব জায়োনিজম (হেনরি ফোর্ড), জায়োনিজম: কনসাইজ হিস্ট্রি (অ্যালেক্স রিভচিন), জায়োজনিজম অ্যান্ড দ্য ল্যান্ড অব ইসরায়েল (ইয়োটাব এলিয়াচ) ।

এই যুদ্ধ নিজ দেশ রক্ষার , নিজ ভুমি রক্ষার , হামাসকে যদি সন্ত্রাসী বলা হয় , তবে ইসরাইল কে কোন শব্দে ডাকা যায় , এমন শব্দ আমার জানা নেই ।

পরিশেষে অনেক কিছুই বলার থাকলেও তা হয়ে উঠেছ নাই , সময় স্বল্পতা এবং শরীরের অবস্থার কারণে , ২ মাসের ও বেশী সময় তীব্র অসুস্থতার সাথে লড়াই করে যখন ঘুম আসছিলো না , তখনমনে হলো লিখাটা ওয়েবে তুলে দেই , তাই দেওয়া । এবং একটাই বলার বিষয় , এই যে আমরা ইহুদী-মুসলিম যুদ্ধ বলে গলায় স্বর তুলছি , যার ফলে আমরা নিজের অজান্তে না জেনে একটা কঠিন সত্যকে লুকিয়ে যাচ্ছি , তাহলো লড়াইটা বস্তুত , বাপদাদার বিটে মাটি রক্ষার , লড়াইটা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার । ঠিক যেমনটা আমরা মানে এই বঙ্গের মানুষ ৭১ এ লড়েছি , কিন্তু তারা এখনো লড়ছে । আর কতোকাল লড়তে হবে তাদের তা হয়তো আমাদের জানা নাই । কিন্তু স্রষ্টার নিকট এইটুকু প্রার্থনা করতেই পারি , তাদের রক্ষা করার জন্য। মজলুম দের পক্ষে স্রষ্টার আর্শীবাদ পাঠানোর জন্য ।

Najmul Haque

মোঃ নাজমুল হক

আমি একজন উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র নির্মাতা। স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনাকে আরো সহজতম করার লক্ষ্যে  ২০১৭ প্রজন্ম ডিজিটাল লিমিটেড নামে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করি। এছাড়া ও আরো বেশ করি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে।

Related Posts