অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তা ভালো আইডিয়া পেলেই ব্যবসার মতো প্রতিযোগিতায় নামার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু একটি ভালো আইডিয়াই কি লাভজনক ব্যবসা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট? না, যথেষ্ট নয়। ব্যবসায়িক জগতে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে গেলে নানা চড়াই-উতড়াই পেরোনোর মতো সক্ষমতা প্রয়োজন।
তবে যারা ব্যবসার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটতে চান না, তারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষা অটুট রাখতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অনুসরণ করলে স্বপ্নজয়ের তৃপ্তি মিলতে পারে।
আয়ের পরিকল্পনা
যারা শুধু আবেগ বা শুধু লাভের ওপর নির্ভর করেন তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই এই ২টি বিষয়ের প্রতি সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আবেগ ছাড়া ফোকাস বজায় রাখা যেমন কঠিন, তেমনি লাভহীন ব্যবসা পেট্রলবিহীন গাড়ির মতো নিরর্থক। নতুন প্রকল্প শুরু করার আগেই অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
লাভ করার সহজ উপায় কী হবে? সেজন্য কতদিন সময় লাগবে? সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কী হতে পারে? ধারণাটি ব্যবসায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি আর্থিক বাস্তবায়নের দিকে না যায়, তবে কোনো আবেগই উদ্দেশ্য সফল করতে পারবে না। আবেগ অবশ্যই দুর্দান্ত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করে, তবে তার জন্য আগে সেটির ব্যবসায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না নিশ্চিত হতে হবে।
বাজার যাচাই
উদ্যোক্তা তার ধারণা নিয়ে উৎসাহী হলেও অন্যরা যদি খুব একটা আগ্রহী না হয় তাহলে আবার পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ধারণা শোনার পর অন্যরা উৎসাহ দেখালে এবং সমর্থন করলে বুঝতে হবে ঠিক পথেই আছেন। তখন ধারণাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে কী লাগবে, প্রক্রিয়াটির জন্য কত খরচ হবে, সেই পথে কতটা ব্যয় করার মতো অর্থ আছে এবং পুরোদমে চলাকালীন কতটা লাভ হবে এসবের বিবরণ তৈরির পর বিশদ অনুসন্ধান করতে হবে।
ক্রেতা সম্পর্কে জানা
ব্যবসা করতে গেলে যেমন বাজার যাচাই করতে হবে, তেমনি আরও সুনির্দিষ্টভাবে ক্রেতা কেন এবং কীভাবে পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে তা অনুসন্ধান করতে হবে। আবেগ নতুন ব্যবসা পরিচালনা এবং কঠোর পরিশ্রম করার পেছনে চালকের ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্রেতার আকর্ষণবিন্দু না জানলে ব্যবসার সমাধান পাওয়া কষ্টকর হবে। পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনায় তাই এ বিষয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে।
ন্যূনতম কার্যকর পণ্য তৈরি
ব্যবসার ধারণা বাস্তবায়নের জন্য আবেগ লাভজনক কি না তা যাচাইয়ের একটি উপায় হলো ন্যূনতম কার্যকর পণ্য (এমভিপি)। এটি পণ্য বা পরিষেবার সবচেয়ে মৌলিক সংস্করণ, যা তৈরি করে গ্রাহকদের অফার করতে হয়। এটি ক্রেতার চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। একবার এমভিপি যাচাই করার পরে আরও বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা যোগ করা যায়। তবে এটির চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে এমন একটি পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করা যা গ্রাহকদের পছন্দ এবং লাভজনক হবে।
বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া
ব্যবসায়িক ধারণা থেকে অর্থ উপার্জন করা যৌক্তিক হবে কি না তা জানতে ব্যবসায়িক মিটআপ, অনলাইন কমিউনিটি বা লিংকডইনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আপনি নতুন হয়ে থাকলে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের আলোচনা শুনতে হবে। তারপর ধারণার সঙ্গে গ্রাহকদের প্রত্যাশার তুলনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসা শুরু করার আগে সে বিষয়ে অন্যান্য ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে।
নতুনত্ব খুঁজে বের করা
লাভজনক ব্যবসা করার উপায় হলো প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা কিছু করা। প্রতিযোগিতার বাজারে সম্পূর্ণ নতুন ধারণা নিয়ে আসা খুব কঠিন। তবু একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করা যেতে পারে যা আইডিয়াতে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করে। এতে অন্যদের থেকে শুরুতেই এক ধাপ এগিয়ে থাকা যাবে।
পরিবর্তনকে স্বাগত জানানো
সময়ের সঙ্গে প্রবণতা, ব্যবসায়িক প্রত্যাশা এবং ব্যবসার প্রভাবও পরিবর্তিত হয়। এসব বিষয় মেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যোগাযোগের সমন্বয়
উদ্যোক্তার ব্যবসা ক্রেতাকে আগ্রহী করছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ক্রেতার মনস্তত্বের উপাদান যাচাই করতে হবে। ক্রেতা কী চাচ্ছে, কোন সুবিধা তাকে আকৃষ্ট করছে, কীসের অনুপস্থিতি হতাশ করছে ইত্যাদি অনুসন্ধান করার জন্য ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।