একটি স্টার্টআপ শুরু করতে যে ৯ টি পদক্ষেপ / পরিকল্পনা আপনাকে সাহায্য করতে পারে:
আপনি যদি পূর্বে কখনও ব্যবসা না করে থাকেন তবে প্রথমবার ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে একটু ভয় হতেই পারে। কারণ এর জন্য অনেক পরিশ্রম এবং পরিকল্পনা লাগে। তার উপর , বেশীর ভাগ ব্যবসার মাত্র অর্ধেক পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় টিকে থাকে, বাকি গুলো এর মাধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
এই আলোচনায় আমরা স্টার্টআপের জন্য ৯ টি কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনি অনুসরণ করতে পারেন আপনার কোম্পানীকে এগিয়ে নিতে এবং চালু করতে:
১. একটি দুর্দান্ত আইডিয়া দিয়ে শুরু করুন:
একটি ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করার জন্য আপনার প্রথম ধাপ হল একটি সমস্যা এবং সমাধান চিহ্নিত করা। এর কারণ হল আমরা যদি লক্ষ্য করি সফল স্টার্টআপ গুলি এমন কিছু ধারণা থেকে শুরু হয় যা গ্রাহকদের একটি গ্রুপের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু তার মানে এই না যে আপনার ধারণা সবসময় নতুন হতে হবে! আপনি বিদ্যমান পণ্য বা পরিষেবাগুলি এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারেন যা ভোক্তার জন্য আরও ভাল এবং সহজ হতে পারে:
- পণ্যের উপস্থাপনের ধরণ পরিবর্তন
- নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা
- গ্রাহকরা ইতিমধ্যেই পছন্দ করেন এমন পণ্যের নতুন ব্যবহার খোঁজা৷
উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি অ্যাপল এর শুরুর দিকটা দেখি তাহলে দেখতে পাবো। যখন অ্যাপল বাজারে উন্নতমানের কম্পিউটার নিয়ে এসেছে যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকটা উন্নত এবং বাজারে আরও ভালভাবে ফিট করে। তারা আইফোন এবং আইপ্যাডের মতো নতুন পণ্যের বিকাশ অব্যাহত রেখেছে, প্রতিটি আপডেটের সাথে আরও কার্যকর করে তোলে। যেমন তারা iPads-এর জন্য একটি কীবোর্ড যোগ করছে যা তাদের ল্যাপটপের মতো করে সহজে ব্যবহার করা যায়। মনে হয় না অ্যাপলের বর্তমান জনপ্রিয়তা, বাজার সর্ম্পকে আপনাদের বলতে হবে।
২. একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করুন
যখনই আপনার ব্যবসায়ের আইডিয়া ঠিক হয়ে গেলো এইবার আপনি একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা শুরু করুন যা আপনার পণ্য এবং সার্ভিস গুলিকে বিস্তারিত ভাবে উপস্থান করে। এটিতে আপনার ইন্ডাস্ট্রি, অপারেশনাল, ফাইনান্স এবং মার্কেটিং এনালাইসিস এর মতো বিষয় গুলো থাকবে।
আপনার স্টার্টআপের জন্য আর্থিক সহযোগীতা পাওয়ার জন্য একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লেখাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক কিংবা আর্থিক সংস্থাগুলি এমন সংস্থাগুলিকে ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি যেগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে যে তারা কীভাবে অর্থ ব্যবহার করতে চলেছে এবং কেন তাদের এটি প্রয়োজন।
৩. আপনার স্টার্টআপের জন্য অর্থ বা মূলদন সংগ্রহ করুন
আপনার খরচ যাই হোক না কেন, সেটি আপনাকে ম্যানেজ করতে হবে। শুরুর অবস্থায় মূলদন সংগ্রহ একটি কঠিন কাজ , তার জন্য আপনি কাজে লাগে পারেন নিচের মাধ্যম গুলোকে-
- ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলি
- এঞ্জেল ইনভেস্টর
- ভেঞ্চার ক্যাপিটাল
- ব্যাংক লোন
উন্নত দেশ গুলোতে এর বাহিরেও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা সহজ শর্তে ঋণ দেয় , আমাদের দেশে ওই সুবিধাগুলো তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবে আপনার যদি পূর্বের আয় মোটামুটি ভালো থাকে আর সেটি ব্যাংক এর মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে, মূল কথা আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট ভালো হয়, তাহলে আপনি ক্রেডিট কার্ড, কিংবা ব্যাংক থেকে ব্যাক্তগত ঋণ নিয়ে ও সেটি ম্যানেজ করতে পারেন ।
এতো কিছুর পরেও যদি আপনি আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থের যোগান করতে না পারেন এবং এর পরেও শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে আপনার ব্যবসা পরিচলনার খরচ কমিয়ে নিয়ে আসার দিকে লক্ষ করতে হবে । এবং ঝুকি নিয়ে শুরু করতে হবে , যা অনেকইটাই ঝুকিপূর্ণ কারণ জরিপ অনুযায়ী দেখা যায় প্রায় ২৯% স্টার্টআপ ব্যর্থ হয় কারণ তাদের অর্থ ফুরিয়ে যায়।
আর যদি আপনি আপনার প্রয়োজনীয় অর্থ পেয়ে যান , তাহলে অবশ্যই আপনাকে আপনার খরচ, ক্যাশ ফ্লো (Cash Flow) এবং আপনার নেওয়া লোনের সুধ কেমন হবে এই সব কিছুর একটা হিসাব করে নিন । তাহলে আপনার ব্যবসার হিসেব ট্র্যাক করতে সুবিধা হবে এর জন্য আপনি QuickBooks কিংবা FreshBooks ব্যবহার করতে পারেন।
৪. সঠিক লোকেদের সাথে নিজেকে ঘিরে রাখুন
ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি থাকতে পারে। সেজন্য আপনাকে পথ দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক উপদেষ্টার প্রয়োজন হবে, যেমন:
- আইনজীবী
- সার্টিফাইড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সিপিএ)
- ব্যাংকার
- ইন্সুরেন্স কোম্পানি
ছোট ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক স্টার্টআপ টিম তৈরি করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে আপনি সাবধানে আপনার জন্য টিম মেম্বার নির্বাচন করতে চাইবেন:
- সহ-প্রতিষ্ঠাতা (Co-founders)
- কর্মচারী
৫. আইনি বিষয় গুলোর দিকে নজর দিন:
আপনার পণ্য ডিজাইন করা থেকে শুরু করে আপনার কর্মক্ষেত্র (অফিস) সেট আপ করা, আপনার স্বপ্নের স্টার্টআপ খোলা অনেক মজার হতে পারে। কিন্তু আপনি আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজারে প্রবেশ করার আগে, আপনার র্স্টাটআপকে সাফল্যের সর্বোত্তম স্থানে নেওয়ার জন্য অবশ্যই সঠিক আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে:
- একটি ব্যবসা লাইসেন্সের জন্য আবেদন
- আপনার ব্যবসার নাম নিবন্ধন
- ট্যাক্স আইডি নিবন্ধন
- ট্রেডমার্ক
- একটি ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা
- যে ইন্ড্রাস্টি নিয়ে কাজ করবেন তার সর্ম্পকে সঠিক বিষয় জানা (আইনি বিষয় সমূহ)
- ক্লায়েন্ট এবং অন্য যাদের সাথে আপনি কাজ করার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য চুক্তি তৈরি করা
৬. একটি অফিস স্থাপন করুন (এড্রেসেবল এবং অনলাইন)
একটি অফিস স্পেস সেট আপ করতে হবে, সেটি ভাড়ায় নিবেন নাকি কিনে নিবেন সেটি আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী বেষ্ট যা হবে তাই করুন । তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে স্টার্টআপগুলি শুরুতে ভাড়ায় অফিস নিয়ে থাকে যাতে করে কোম্পানির অন্যান্য দিকগুলিতে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে। তবে কিছু অবস্থানে আপনার স্টার্টআপের জন্য লিজিং একটি সস্তা উপায় হতে পারে। কেন না বাড়ির মালিক যে কোন সময় ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে করে আপনার খরচ বেড়ে যাবে, এর ফলে আপনাকে অফিস ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থায় ও ফেলতে পারে।
আজকের ডিজিটাল যুগে, একটি অনলাইন উপস্থিতি এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সেট আপ করা গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, এটি ছাড়া সফল হতে আপনার সমস্যা হবে। এর কারণ হল গ্রাহকরা ক্রমবর্ধমানভাবে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন এবং আপনার পণ্য সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে গুগল ব্যবহার করছেন। এর উপরে, ওয়েবসাইট থাকলে সুবিধাগুলি পাওয়া যায়, যেমন:
- ছুটির দিনে আপনার দোকান ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা, যা বিক্রয় বৃদ্ধি করে।
- সারা বিশ্বের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে আপনাকে সাহায্য করা।
- গ্রাহকদের আপনার পণ্য সম্পর্কে পর্যালোচনা পড়ার অনুমতি দেওয়া, যা আপনার ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পারে।
আপনি একটি ব্লগ শুরু করে আপনার অনলাইন উপস্থিতি আরও বাড়াতে পারেন৷ এটি আপনাকে আপনার ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করতে পারে। আপনি Google অনুসন্ধানে আপনার ব্র্যান্ডের দৃশ্যমানতা বাড়াতে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO) ব্যবহার করতে পারেন। এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলিতে নিয়মিত পোস্ট করা আপনার জন্য বাড়িতি সুবিধা নিয়ে আসবে, যেখানে আপনার কাক্ষিত গ্রাহক / ক্রেতা ঘন ঘন ভিজিট করে৷
৭. একটি মার্কেটিং পরিকল্পনা তৈরি করুন
প্রতিটি স্টার্টআপকে মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ এবং সময় ব্যয় করতে হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়, কারণ এটি আপনাকে সাহায্য করে:
- ব্র্যান্ড পরিচয় স্থাপন করতে।
- প্রতিযোগীতায় এগিয়ে রাখতে
- গ্রাহকের সাথে সর্ম্পক তৈরি এবং বিশ্বাস বৃদ্ধি করতে
- দৃশ্যমানতা বাড়ায়, যা নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করে
- আপনার কোম্পানির খ্যাতি শক্তিশালী করতে
কিছু র্স্টাটআপ মার্কেটিং কার্যকলাপ যা আপনার লক্ষ্য করা উচিত:
- গ্রাহকদের সম্পৃক্ত করতে এবং কুপন বা অফার প্রচার করতে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করা
- রেফারেলের জন্য পুরষ্কার দেওয়া, যা আরও ব্যবসা নিয়ে আসে
- বিনামূল্যে সেম্পল বা ডেমো অফার করা
- কমিউনিটি ইভেন্ট গুলোতে স্পন্সর করা যাতে আপনার প্রতিষ্ঠান / পণ্য সর্ম্পকে লোকজন জানতে পারে
৮. একটি কাষ্টমার বেস তৈরি করুন
আপনার স্টার্টআপ ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য, আপনি একটি কাষ্টমার বেস তৈরি করতে হবে, কেননা পুরানো কাষ্টমার আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে । যেমন-
- আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি করা, কারণ তারা আপনার প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে জানে।
- নতুন গ্রাহকদের একটি বার্তা পাঠানো যে আপনার ব্র্যান্ড বিশ্বস্ত
- রেফারেল অর্জন করা, যা নতুন গ্রাহকদের খোঁজার সাথে আপনার সময় এবং শ্রম সাশ্রয় করে
আপনি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে পারেন এমন কিছু উপায়ের মধ্যে রয়েছে:
- নিয়মিত ভালো পণ্য/সেবা অফার করা
- লয়ালিটি প্রোগ্রাম(loyalty program) চালু করা,
- সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবহার করা, যার মধ্যে আপনার টার্গেট শ্রোতাদের কাছে পণ্য প্রচার করার জন্য তাদেরকে রিওর্য়াড বা অর্থ প্রদান করা।
- উন্নত গ্রাহক সেবা উপর নজর দেওয়া
- গ্রাহকদের প্রয়োজনীত ভালোভাবে বুজার জন্য মার্কেট রির্চাস করা
- গ্রাহকের কাছ থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া চাওয়া
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ শপিং সেন্টারস (ICSC) দেখেছে যে ৯২% ভোক্তা বলেছেন যে নির্দিষ্ট খুচরা বিক্রেতাদের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণ তারা ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করছে আবার অন্য দিকে, যখন ৭৯% বলেছেন যে তারা পণ্যে গুণমানের উপর নির্ভর করে বিক্রেতা নির্ণয় করেন।
৯. প্ল্যান টু চেঞ্জ :
এর মানে হলো আপনার পরিকল্পনার পরিবর্তন করা কারণ স্টার্টআপগুলি তাদের প্রথম কয়েক বছরের অপারেশনে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। সাফল্যের চাবিকাঠি হল আপনার বাজার এবং ইন্ডাস্ট্রির সাথে আপনার ব্যবসায়িক মডেলকে বিকশিত করা এবং মানিয়ে নেওয়া।
আপনি বাজার এবং ইন্ডাস্ট্রির সাথে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু কৌশল হল:
- হায়ারিং থিংকার যাতে আপনি জানেন যে আপনার টিম মানিয়ে নিতে পারে
- কাষ্টমারের কথা শুনুন এবং তাদের ফিডব্যাক নিন
- ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তনের দিকে নজর রাখুন
মনে রাখবেন, স্টার্টআপ এমন ব্যবসা যা ভোক্তাদের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে বিকশিত হয়। এবং এর উপরই নির্ভর করে আপনি পরিবর্তী বছর গুলোতে কিভাবে টিকে থাকবেন , কিংবা আপনার ভবিষ্যৎ । আর এই সমস্ত বিষয়ে আপনার বিজনেসের জন্য সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রজন্ম ডিজিটাল লি: আছে আপনাদের পাশে । আমাদের Business Starter kit সার্ভিসটিতে একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য যত গুলো বিষয় প্রয়োজন হয় তার সকল কিছুই অন্তর্ভুক্ত আছে ।